অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা ফি আরও বাড়ছে। এই সিদ্ধান্ত দেশটির আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনের (৩ মে, ২০২৫) প্রাক্কালে লেবার পার্টি ও লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মধ্যে তীব্র আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকার এবং বিরোধী নেতা পিটার ডাটনের দল উভয়েই ভিসা ফি বাড়ানোর পক্ষে।
এর পেছনে মূল কারণ হলো অভিবাসনের চাপ কমানো এবং আবাসন সংকট মোকাবিলা। এই লেখায় আমরা অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ফি বৃদ্ধির নতুন নীতি, এর প্রভাব এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প পথ নিয়ে আলোচনা করব।
অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি বৃদ্ধি ২০২৫
২০২৪ সালের জুলাই থেকে অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থী ভিসার ফি ৭১০ অস্ট্রেলীয় ডলার থেকে বেড়ে ১,৬০০ অস্ট্রেলীয় ডলার হয়েছে। লেবার পার্টি ঘোষণা দিয়েছে, তারা পুনর্নির্বাচিত হলে এই ফি ২,০০০ অস্ট্রেলীয় ডলার (প্রায় ১,২৭৯ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত বাড়াবে। অন্যদিকে, বিরোধী দলের প্রস্তাব আরও কঠোর। তারা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিসা ফি ২,৫০০ অস্ট্রেলীয় ডলার এবং শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (গ্রুপ অব এইট) জন্য ৫,০০০ অস্ট্রেলীয় ডলার করার পরিকল্পনা করছে।
অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জিম চালমারস এবং বাণিজ্যমন্ত্রী ক্যাটি গ্যালাঘার জানিয়েছেন, এই ফি বৃদ্ধি আগামী চার বছরে ৭৬০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার আয় করবে। এই অর্থ দেশের অর্থনীতি ও আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে।
কেন ভিসা ফি বাড়ছে?
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা খাত দেশটির অর্থনীতির একটি বড় অংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাত থেকে ৩৬.৪ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার আয় হয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন বৃদ্ধির কারণে আবাসন খরচ বেড়েছে এবং স্থানীয়দের জন্য বাসস্থানের সংকট দেখা দিয়েছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ২ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে গিয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১২.১% এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ৭.৩% বেশি।
করোনা মহামারির পর ২০২২ সালে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়েছে। এই চাপ কমাতে ২০২৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া সরকার ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার মান বাড়ানো এবং ভিসার জন্য ন্যূনতম সঞ্চয়ের পরিমাণ ২৪,৫০৫ থেকে ২৯,৭১০ অস্ট্রেলীয় ডলারে উন্নীত করা অন্যতম।
শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব
ভিসা ফি বাড়ার কারণে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়া এখন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল। যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার ফি ১৮৫ মার্কিন ডলার এবং কানাডায় ১৫০ কানাডীয় ডলার। এই খরচের বোঝা অনেক শিক্ষার্থীকে বিকল্প দেশের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করতে পারে। তবে, অস্ট্রেলিয়ার উচ্চমানের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পড়াশোনার পর কাজের সুযোগ এখনও অনেকের কাছে আকর্ষণীয়।
লেবার সরকার ২০২৫ সালে ২,৭০,০০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যেখানে বিরোধী দল এই সংখ্যা ২,৪০,০০০-এ সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। উভয় দলই অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি গ্রহণের পক্ষে। তবে, শিক্ষা খাতের আয়ের উপর নির্ভরশীলতা এই নীতিগুলোকে জটিল করে তুলছে।
উপসংহার
অস্ট্রেলিয়ায় ভিসা ফি বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থার মান এবং ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা এখনও আকর্ষণীয়। শিক্ষার্থীদের উচিত আর্থিক পরিকল্পনা সঠিকভাবে করা এবং স্কলারশিপের সুযোগগুলো কাজে লাগানো। অস্ট্রেলিয়ার নতুন নীতি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখলেও শিক্ষা খাতের গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে।
1 thought on “অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি বৃদ্ধি ২০২৫”