গণিতে সহমৌলিক সংখ্যা খুব সহজ এবং মজার একটি বিষয়। এটি এমন দুটি সংখ্যা যাদের মধ্যে ১ ছাড়া আর কোনো সাধারণ গুণনীয়ক নেই। অর্থাৎ, এই সংখ্যাগুলোকে ১ ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। এই আর্টিকলে আমরা জানবো সহমৌলিক সংখ্যা কী, এর উদাহরণ, বৈশিষ্ট্য, বের করার নিয়ম, এবং কোথায় ব্যবহার হয়। এটি সহজ ভাষায় লেখা, যাতে নতুন শিক্ষার্থীরাও সহজে বুঝতে পারে।
সহমৌলিক সংখ্যার উদাহরণ
সহমৌলিক সংখ্যা বোঝার জন্য উদাহরণ দেখি। ধরি, ৬ এবং ৫ সংখ্যা দুটি। এদের গুণনীয়ক বের করলে:
- ৬ এর গুণনীয়ক: ১, ২, ৩, ৬
- ৫ এর গুণনীয়ক: ১, ৫
এখানে ৬ এবং ৫ এর মধ্যে শুধু ১ সাধারণ। তাই ৬ এবং ৫ সহমৌলিক সংখ্যা।
আরেকটি উদাহরণ, ৭ এবং ৮:
- ৭ এর গুণনীয়ক: ১, ৭
- ৮ এর গুণনীয়ক: ১, ২, ৪, ৮
এখানেও শুধু ১ সাধারণ। তাই ৭ এবং ৮ সহমৌলিক।
সহমৌলিক সংখ্যা কী
সহমৌলিক সংখ্যা কী? এটি দুটি সংখ্যা যাদের গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বা গসাগু ১। অর্থাৎ, এই সংখ্যাগুলোর মধ্যে ১ ছাড়া আর কোনো সাধারণ গুণনীয়ক নেই। এটি গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। যেমন, ৩ এবং ৪ সহমৌলিক কারণ তাদের গসাগু ১। কিন্তু ৬ এবং ৮ সহমৌলিক নয়, কারণ তাদের গসাগু ২।
সহমৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্য
সহমৌলিক সংখ্যার কিছু সহজ বৈশিষ্ট্য আছে:
- গসাগু ১: এদের সবচেয়ে বড় গুণনীয়ক ১।
- লসাগু: দুটি সহমৌলিক সংখ্যার লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বা লসাগু হলো তাদের গুণফল।
- ভগ্নাংশ: ভগ্নাংশের লব এবং হর সহমৌলিক হলে ভগ্নাংশটি সহজ হয়।
- পূর্ণসংখ্যা: সহমৌলিক সংখ্যা সাধারণত পূর্ণসংখ্যা হয়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো সহমৌলিক সংখ্যাকে গণিতে বিশেষ করে।
সহমৌলিক সংখ্যা বের করার নিয়ম
সহমৌলিক সংখ্যা বের করতে আমরা গসাগু বের করি। এর জন্য দুটি সহজ উপায় আছে:
- গুণনীয়ক তালিকা:
- দুটি সংখ্যার গুণনীয়ক লিখুন।
- দেখুন কোন গুণনীয়ক সাধারণ।
- যদি শুধু ১ সাধারণ হয়, তবে সংখ্যা দুটি সহমৌলিক।
- ১০ এর গুণনীয়ক: ১, ২, ৫, ১০
- ৯ এর গুণনীয়ক: ১, ৩, ৯
- সাধারণ: ১ (তাই সহমৌলিক)।
- ইউক্লিডের পদ্ধতি:
- বড় সংখ্যাকে ছোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করুন।
- ভাগশেষকে আগের ভাজক দিয়ে ভাগ করুন।
- এভাবে চালিয়ে যান যতক্ষণ ভাগশেষ ০ না হয়।
- শেষ ভাজকটি গসাগু। যদি ১ হয়, তবে সহমৌলিক।
- ২৮ ÷ ১৫ = ভাগশেষ ১৩
- ১৫ ÷ ১৩ = ভাগশেষ ২
- ১৩ ÷ ২ = ভাগশেষ ১
- ২ ÷ ১ = ভাগশেষ ০
- গসাগু = ১ (তাই সহমৌলিক)।
পরস্পর সহমৌলিক সংখ্যা কাকে বলে
পরস্পর সহমৌলিক সংখ্যা হলো এমন দুটি বা ততোধিক সংখ্যা যাদের গসাগু ১। এটি সহমৌলিক সংখ্যারই আরেক নাম। যেমন, ৩, ৫, এবং ৭ পরস্পর সহমৌলিক কারণ তাদের গসাগু ১। এই ধারণা গণিতের বিভিন্ন অংশে ব্যবহৃত হয়।
পরস্পর সহমৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্য
পরস্পর সহমৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্য সহমৌলিক সংখ্যার মতোই। কিছু বিশেষ দিক হলো:
- গ্রুপ তৈরি: এরা গণিতে গ্রুপ তৈরিতে সাহায্য করে।
- স্ব: এদের মধ্যে ১ ছাড়া কোনো সাধারণ গুণনীয়ক নেই।
- ব্যবহার: ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং কোডিংয়ে এদের ব্যবহার বেশি।
সহমৌলিক জোড় সংখ্যা কাকে বলে
সহমৌলিক জোড় সংখ্যা হলো এমন দুটি সংখ্যা যেখানে উভয়ই জোড় এবং তাদের গসাগু ১। কিন্তু জোড় সংখ্যার গুণনীয়ক হিসেবে ২ থাকে, তাই সাধারণত জোড় সংখ্যার জোড়া সহমৌলিক হয় না। যেমন, ৪ এবং ৬ এর গসাগু ২, তাই এরা সহমৌলিক নয়।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে জোড় সংখ্যা সহমৌলিক হতে পারে। যেমন, ৪ এবং ৯:
- ৪ এর গুণনীয়ক: ১, ২, ৪
- ৯ এর গুণনীয়ক: ১, ৩, ৯
- গসাগু: ১ (তাই সহমৌলিক)।
সহমৌলিক জোড় সংখ্যার বৈশিষ্ট্য
সহমৌলিক জোড় সংখ্যার বৈশিষ্ট্য সাধারণ সহমৌলিক সংখ্যার মতো। তবে কিছু বিষয় লক্ষণীয়:
- কম দেখা যায়: জোড় সংখ্যার মধ্যে সহমৌলিক জোড়া খুব কম পাওয়া যায়।
- নির্দিষ্ট ব্যবহার: এদের ব্যবহার কিছু বিশেষ গণিত সমস্যায় হয়।
সহমৌলিক সংখ্যার ব্যবহার
সহমৌলিক সংখ্যা গণিতের অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো:
- ভগ্নাংশ সহজ করা: ভগ্নাংশের লব এবং হর সহমৌলিক হলে ভগ্নাংশ সহজ হয়। যেমন, ৮/১২ কে ২/৩ করা যায়।
- ক্রিপ্টোগ্রাফি: কম্পিউটার নিরাপত্তায় সহমৌলিক সংখ্যা ব্যবহৃত হয়।
- গসাগু-লসাগু: দুটি সংখ্যার সম্পর্ক জানতে সহমৌলিক সংখ্যা সাহায্য করে।
- গণিত সমস্যা: সংখ্যাতত্ত্বে এদের ব্যবহার হয়।
নিচে একটি টেবিলে সহমৌলিক সংখ্যার ব্যবহার দেখানো হলো:
ক্ষেত্র | ব্যবহার |
---|---|
ভগ্নাংশ | সহজ করা |
ক্রিপ্টোগ্রাফি | নিরাপত্তা কোড তৈরি |
গসাগু-লসাগু | সংখ্যার সম্পর্ক নির্ণয় |
সংখ্যাতত্ত্ব | গ্রুপ এবং সমস্যা সমাধান |
দুটি সহমৌলিক সংখ্যার গসাগু কত
দুটি সহমৌলিক সংখ্যার গসাগু সবসময় ১। কারণ তাদের মধ্যে ১ ছাড়া আর কোনো সাধারণ গুণনীয়ক নেই। যেমন, ৫ এবং ৯ এর গসাগু ১।
ইউরোপ সেনজেন ভুক্ত দেশ কয়টি ও কি কি? ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা 2025
দুটি সহমৌলিক সংখ্যার লসাগু কত
দুটি সহমৌলিক সংখ্যার লসাগু হলো তাদের গুণফল। কারণ তাদের গসাগু ১। তাই লসাগু = সংখ্যা ১ × সংখ্যা ২।
উদাহরণ: ৩ এবং ৪
- লসাগু = ৩ × ৪ = ১২।
সহমৌলিক সংখ্যা নিয়ে লেখকের শেষ কথা
সহমৌলিক সংখ্যা গণিতের একটি সহজ এবং সাধারণ ধারণা। এটি গণিতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং বাস্তব জীবনে, যেমন কম্পিউটার নিরাপত্তায়, ব্যবহৃত হয়। এই নিবন্ধে আমরা সহমৌলিক সংখ্যা কাকে বলে, এর বৈশিষ্ট্য, বের করার নিয়ম, এবং ব্যবহার সম্পর্কে জেনেছি। নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সহজভাবে বোঝানো হয়েছে। আপনি এই ধারণা ব্যবহার করে গণিতের অনেক সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারবেন। গণিতে আগ্রহী হলে সহমৌলিক সংখ্যা সম্পর্কে জানা আপনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
1 thought on “সহমৌলিক সংখ্যা কী ও সহমৌলিক সংখ্যা কাকে বলে ।কত প্রকার সহ বিস্তারিত বর্ণনা”