পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” একটি প্রাচীন ও প্রাসঙ্গিক বাংলা প্রবাদ যা আমাদের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে গঠিত। এ প্রবাদটির তাৎপর্য হলো—সৌভাগ্য কেবলমাত্র তারাই অর্জন করতে পারে, যারা পরিশ্রম করে। কোনো মানুষ জন্মগতভাবে সৌভাগ্যবান হয় না, বরং পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই সে নিজের ভাগ্য গড়ে তোলে। আলস্য, হতাশা ও ভাগ্যের অন্ধ বিশ্বাস মানুষকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়।
বিপরীতে, যারা আত্মবিশ্বাস, নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমকে জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই প্রকৃত অর্থে সফল ও সৌভাগ্যবান হয়ে ওঠে।পরিশ্রম শুধু সফলতার পথ তৈরি করে না, এটি মানুষকে ধৈর্যশীল, আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। কৃষক, শ্রমিক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক—সবার জীবনেই পরিশ্রম প্রধান ভূমিকা পালন করে। একজন ছাত্রের ভবিষ্যৎও নির্ধারিত হয় তার শ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। তাই বলা যায়, “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” শুধু একটি বাণী নয়, এটি একটি বাস্তব জীবনমুখী দর্শন।
এই ভাবসম্প্রসারণমূলক আর্টিকেলে আমরা বিশ্লেষণ করব কীভাবে পরিশ্রম একজন সাধারণ মানুষকে অসাধারণ করে তোলে এবং জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠে।নিচে ভাবসম্প্রসারন এর অংশ গুলো ব্যাখ্যা করা হলো ও আজকের বিষয় নিয়ে লেখা হলো
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম
তো আমরা পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রস্তুতি ভাব সম্প্রসারণটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। এগুলো হলো মূলভাব সম্প্রসারিত ভাব ও মন্তব্য। আমরা নিচে পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রস্তুতি এরকম তিনটি ভাব সম্প্রসারণ এর উদাহরণ দিয়েছি। আপনাদের যেটি ভালো লাগে সেটি আপনারা বাছাই করে লিখে নিতে পারেন। আমাদের পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাব সম্প্রসারণ গুলো হলো ১.পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ পার্ট-০১.২.পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ part-০২ ও সব শেষ হলো পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ – পার্ট 3। নিচে একে একে পার্ট এক পাট দুই ও পার্ট তিন নিয়ে লেখা হলো।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ পার্ট -০১
মূলভাব:“পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” এই প্রবাদটি বোঝায় যে সৌভাগ্য বা সাফল্য অলৌকিক কোনো উপায়ে আসে না, বরং তা কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফল। মানুষ যত বেশি নিষ্ঠা ও পরিশ্রম করবে, তার জীবনে সাফল্য ততই নিশ্চিত হবে। অলসতা ও ভাগ্যনির্ভরতা কখনো স্থায়ী সাফল্য এনে দিতে পারে না।
সম্প্রসারিত ভাব:জীবনে যারা সত্যিকার অর্থে সফল হয়েছেন, তাঁদের জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, তাঁরা সবাই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য গড়েছেন। যেমন, বিজ্ঞানী নিউটন, সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা আমাদের দেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান—তাঁরা কেউই অলসভাবে ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে বসে থাকেননি। দীর্ঘসময় অধ্যবসায়, সংগ্রাম এবং নিঃস্বার্থ শ্রম দিয়েই তাঁরা ইতিহাসে নিজেদের নাম অমর করে তুলেছেন। পরিশ্রম ছাড়া মেধাও নিষ্ফল। শুধু প্রতিভা থাকলেই হবে না, সেটিকে কাজে লাগাতে হবে ঘাম ঝরিয়ে। একজন কৃষক যদি পরিশ্রম না করেন, তবে জমিতে ফসল ফলবে না। আবার একজন শিক্ষার্থী যদি নিয়মিত অধ্যয়ন না করে, তবে ভালো ফলাফল আশা করা ভুল। অর্থাৎ, সবক্ষেত্রেই পরিশ্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য
।মন্তব্য:এই প্রবাদটি আমাদের জীবনে চলার পথের দিশারি হিসেবে কাজ করে। যারা ভাগ্যের উপর ভরসা করে বসে থাকেন, তাঁরা জীবনে সাফল্য পান না। কর্মই মানুষকে মহান করে তোলে, আর এই কর্মের মূল শক্তি হলো পরিশ্রম। বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে শুধুমাত্র পরিশ্রমীরাই এগিয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের উচিত অলসতা ত্যাগ করে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে কঠোর পরিশ্রম করা। তবেই জীবনে সৌভাগ্য ধরা দেবে।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ পার্ট -০২
মূলভাব:“পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি”—এই প্রবাদের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে সত্যিকার সৌভাগ্য কিংবা সাফল্য কোনো দৈব বা আকস্মিক ঘটনা নয়; বরং তা কঠোর শ্রম, একাগ্রতা এবং নিয়মানুবর্তিতার ফল। ভাগ্যের চেয়ে পরিশ্রমই মানুষের উন্নতির প্রধান চাবিকাঠি।
সম্প্রসারিত ভাব:মানুষ জন্মগতভাবে কিছু প্রতিভা নিয়ে আসলেও, সেগুলোর বিকাশ ঘটে নিয়মিত পরিশ্রমের মাধ্যমে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যারা সমাজে স্মরণীয় হয়েছেন, তাঁরা সবাই কঠোর পরিশ্রমে অগ্রগতি লাভ করেছেন। যেমন ধরা যাক টমাস আলভা এডিসনের কথা। তিনি হাজারবার ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক বাল্ব উদ্ভাবনে সফল হন। একইভাবে, একজন দিনমজুর সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করেন—তাঁর জীবন যত কঠিন হোক না কেন, সেই পরিশ্রমই তাঁর ও তাঁর পরিবারের রুটিরুজির পথ সুগম করে। পক্ষান্তরে, যারা অলস থাকে এবং সব কিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেয়, তারা জীবনে কোনো স্থায়ী উন্নতি করতে পারে না।
মন্তব্য:প্রবাদটি আমাদের শেখায় যে সাফল্যের জন্য ভাগ্যের অপেক্ষা না করে কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হবে। এই পৃথিবীতে স্থায়ী কিছু অর্জন করতে চাইলে আমাদের অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। স্বপ্নপূরণ কখনো সহজ নয়, তবে কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস থাকলে তা অসম্ভবও নয়। কাজেই, আমাদের জীবনে “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি”—এই কথাটিকে মূলমন্ত্র করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুচ্ছেদ
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ পার্ট -০৩
মূলভাব:“পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” প্রবাদের মানে হলো—সৌভাগ্য বা সাফল্য কেবলমাত্র তাঁদের কপালে জোটে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। ভাগ্য, ইচ্ছা কিংবা কল্পনায় নয়—বাস্তব অর্জন আসে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম থেকে।
সম্প্রসারিত ভাব:বিজ্ঞানের জগতে কিংবা সাহিত্যে, শিল্পকলায় কিংবা খেলাধুলায়—যে কোনো ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের পেছনে রয়েছে নিরন্তর সাধনা ও পরিশ্রম। বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসি কিংবা বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান—তাঁদের সাফল্য হঠাৎ আসেনি। ছোটবেলা থেকেই কঠোর অনুশীলন, নিয়মানুবর্তিতা এবং আত্মনিবেদন তাঁদেরকে আজকের অবস্থানে এনেছে। একজন শিক্ষার্থীও যদি নিয়মিত পাঠে মনোযোগী না হয়, তাহলে সে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারবে না। আবার যদি একজন লেখক প্রতিদিন লেখার চর্চা না করে, তবে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষমতা হারিয়ে যাবে। পরিশ্রম একদিকে যেমন সফলতার পথ খুলে দেয়, অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসকেও দৃঢ় করে।
মন্তব্য:এই প্রবাদের তাৎপর্য জীবনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে, যখন সবাই দ্রুত সফল হতে চায়, তখন এই প্রবাদটি আমাদের ধৈর্য ও পরিশ্রমের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। সুতরাং আমাদের উচিত, অলসতা, হতাশা ও ভাগ্যনির্ভরতা পরিহার করে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়া। কারণ, একমাত্র পরিশ্রমই সৌভাগ্য এনে দিতে পারে, অন্য কিছু নয়।