কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাব সম্প্রসারণ ।সহজ ভাষায় ভাবসম্প্রসারণ

Written by Jarif Al Hadee

Published on:

আজকের আর্টিকেলে আমরা কীর্তিমানের মৃত্যু নিয়ে ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আসে। নিচে কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাব সম্প্রসারণের তিনটি অংশ দেওয়া আছে অর্থাৎ তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যে কোন একটি নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারেন।

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাব সম্প্রসারণ -০১

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণ:”কীর্তিমানের মৃত্যু নেই” – এই প্রবাদটি আমাদের জীবনের গভীর এক সত্যের কথা বলে। যাঁরা তাঁদের কর্মের মাধ্যমে সমাজে অমর কীর্তি স্থাপন করেন, তাঁদের শারীরিক মৃত্যু হলেও তাঁদের প্রভাব, চিন্তা ও অবদান চিরকাল বেঁচে থাকে। এই ভাবনা আমাদের মনে আশা ও প্রেরণা জাগায়। কীর্তিমান ব্যক্তিরা তাঁদের জীবনের মাধ্যমে এমন কিছু রেখে যান, যা সময়ের সীমানা অতিক্রম করে।

আমরা যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা ভাবি, তাঁর কাব্য, গান ও সাহিত্যের কথা মনে পড়ে। তিনি শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর গীতাঞ্জলি, তাঁর গান, তাঁর শিক্ষাভাবনা আজও আমাদের হৃদয়ে বেঁচে আছে। তাঁর সৃষ্টি প্রতিটি বাঙালির জীবনে এক অমর আলোর মতো জ্বলে। একইভাবে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কথা ভাবলে তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামের আগুন আমাদের মনে জ্বলে ওঠে। তাঁর “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” এই কথা আজও তরুণদের প্রেরণা জোগায়। তাঁরা শারীরিকভাবে চলে গেলেও তাঁদের কীর্তি আমাদের মাঝে অমর।

কীর্তিমানের জীবন আমাদের শেখায় যে, জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও কর্মের মাধ্যমে আমরা অমরত্ব লাভ করতে পারি। একজন সাধারণ মানুষও তার ছোট ছোট ভালো কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে পারে। যেমন, একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের জীবনে আলো জ্বালিয়ে অমর হয়ে থাকেন। তাই, আমাদের উচিত এমন কাজ করা, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পথ দেখায়। এই প্রবাদটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, কারণ তাঁদের কর্মই তাঁদের চিরজীবী করে রাখে।

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাব সম্প্রসারণ -০২

ভাবসম্প্রসারণ:”কীর্তিমানের মৃত্যু নেই” – এই প্রবাদটি আমাদের বোঝায় যে, যাঁরা সমাজের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন, তাঁদের প্রভাব কখনো ম্লান হয় না। তাঁদের কাজ, তাঁদের আদর্শ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে। এই ভাবনা আমাদের জীবনে নতুন দিকনির্দেশ দেয় এবং সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।

ইতিহাসের পাতায় আমরা দেখি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মহান ব্যক্তি সমাজের জন্য কতটা করেছেন। তিনি নারীশিক্ষার প্রসার, বিধবা বিবাহের প্রচলনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁর শারীরিক মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু তাঁর আদর্শ আজও আমাদের সমাজে জীবিত। তাঁর কাজ আমাদের শেখায় যে, একজন মানুষের কীর্তি সমাজের মানসিকতা বদলাতে পারে। এমনকি, একজন সাধারণ মানুষও তার কাজের মাধ্যমে কীর্তিমান হতে পারেন। যেমন, একজন স্বাস্থ্যকর্মী যিনি মহামারীর সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করেন, তাঁর কাজও সমাজে অমর হয়ে থাকে।

এই প্রবাদটি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। আমরা যদি আমাদের কাজের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি, তবে আমাদের অস্তিত্ব চিরকাল বেঁচে থাকবে। কীর্তিমানের কাজ শুধু তাঁদের নিজেদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি আলোকবর্তিকা। তাই, আমাদের উচিত এমন কাজে মনোনিবেশ করা, যা সমাজের উন্নতি ঘটায় এবং পরবর্তী প্রজন্মকে প্রেরণা দেয়। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, কারণ তাঁদের কাজ সমাজের হৃদয়ে চিরকাল ধরে রাখে।

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাব সম্প্রসারণ -০৩

ভাবসম্প্রসারণ:কীর্তিমানের মৃত্যু নেই” – এই প্রবাদটি কেবল শারীরিক অস্তিত্বের কথা বলে না, বরং আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের অমরত্বের কথা বলে। যাঁরা তাঁদের জীবনকে সৎকর্ম, নীতি ও মূল্যবোধের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করেন, তাঁদের আত্মা সময়ের সীমানা অতিক্রম করে চিরকাল বেঁচে থাকে। এই ভাবনা আমাদের জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

বাঙালি সংস্কৃতিতে আমরা দেখি, স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহাপুরুষ তাঁর আধ্যাত্মিক চিন্তা ও বাণীর মাধ্যমে আমাদের মনে অমর হয়ে আছেন। তাঁর “উঠো, জাগো, এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না” এই বাণী আজও আমাদের জীবনে প্রেরণার উৎস। তাঁর শারীরিক মৃত্যু হলেও তাঁর চিন্তা আমাদের আত্মার সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকে। এই প্রবাদটি আমাদের বোঝায় যে, সৎকর্মের মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মাকে অমর করতে পারি। ভারতীয় দর্শনে কর্মযোগের কথা বলা হয়েছে, যেখানে বলা হয়, ভালো কাজের ফল কখনো নষ্ট হয় না।

একজন সাধারণ মানুষও তার জীবনে সততা, দয়া ও ন্যায়ের পথে চললে কীর্তিমান হতে পারেন। যেমন, একজন মা তার সন্তানদের মধ্যে ভালো মূল্যবোধ স্থাপন করে অমর হয়ে থাকেন। তাই, আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজে আমাদের উচিত এমন কিছু করা, যা আমাদের আত্মাকে উন্নত করে। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, কারণ তাঁদের কর্ম ও আদর্শ আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকে।

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ: লেখকের শেষ কথা

“কীর্তিমানের মৃত্যু নেই” – এই প্রবাদটি আমাদের জীবনের এক গভীর সত্য উন্মোচন করে। যাঁরা তাঁদের কর্ম, সততা ও আদর্শের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখেন, তাঁদের অস্তিত্ব কখনো শেষ হয় না। তাঁদের কীর্তি, তাঁদের চিন্তা আমাদের মাঝে চিরকাল জীবিত থাকে, আমাদের পথ দেখায়। এই ভাবসম্প্রসারণের মাধ্যমে আমরা দেখেছি, কীভাবে মহান ব্যক্তিদের কাজ সময়ের সীমানা অতিক্রম করে। কিন্তু এই প্রবাদ কেবল মহাপুরুষদের জন্য নয়; আমরা প্রত্যেকেই আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজের মাধ্যমে অমরত্বের স্বাদ পেতে পারি। একটি সৎ কাজ, একটি দয়ার হাত, একটি প্রেরণাদায়ী কথা – এসবই আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে। তাই, আসুন আমরা এমন জীবন গড়ি, যা আমাদের চলে যাওয়ার পরেও অন্যদের হৃদয়ে বেঁচে থাকে। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, কারণ তাঁদের কর্মই তাঁদের চিরকাল অমর করে রাখে।

Visited 2 times, 2 visit(s) today
DMCA.com Protection Status
Jarif Al Hadee

আমি Jarif Al Hadee। আমি একজন ছাত্র এবং বাংলা ভাষায় লেখালেখি করতে ভালোবাসি। মূলত শিক্ষা বিষয়ক আর্টিকেল লিখি যাতে শিক্ষার্থীদের উপকার হয়।আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি আপনাদের সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে।